1. admin@allsite.chakrikujun.com : allsite :
Navy - সমস্ত বাংলাদেশী ওয়েবসাইট
May 1, 2024, 9:30 pm
Navy

বাংলাদেশ নৌবাহিনী

বাংলাদেশ নৌবাহিনী বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর নৌযুদ্ধ শাখা যার দায়িত্বে রয়েছে ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার (৪৫,৮৭৪ মা) সমুদ্রসীমা এবং এই এলাকায় অবস্থিত সকল বন্দর এবং সামরিক স্থাপনার নিরাপত্তা। নৌবাহিনীর প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে দেশে এবং বিদেশে বাংলাদেশের সামরিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণ। পাশাপাশি বাংলাদেশ নৌবাহিনী বাংলাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং বিদেশে মানবিক সহায়তা মিশনেও একটি নেতৃত্বস্থানীয় বাহিনী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। নৌবাহিনী আঞ্চলিক সন্ত্রাস বিরোধী কার্যক্রমে একটি প্রধান অংশগ্রহণকারী শক্তি এবং জাতিসংঘ মিশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমেও যুক্ত রয়েছে ।

 

ইতিহাস

প্রারম্ভিক ইতিহাস

দেশীয় জাহাজ নির্মাণ শিল্প বাংলার অনেক পুরানো ঐতিহ্য। চতুর্দশ শতকে ঐতিহাসিক পর্যটক ইবনে বতুতা বাংলায় এসে সোনারগাঁয়ে নির্মিত কাঠের জাহাজে ভ্রমণ করেছিলেন। ইউরোপীয় পর্যটক সিজার ফ্রেডরিকের মতে পঞ্চদশ শতকে চট্টগ্রাম ছিল সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণের মূল কেন্দ্র। সপ্তদশ শতকে তুরস্কের সুলতানের নৌবহর নির্মিত হয় চট্টগ্রামে। দেশীয় জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বিকাশ বাংলায় শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠনের ভিত্তি তৈরি করে।

ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল শাসনের সময় মুঘল নৌবাহিনীর অধিকাংশ জাহাজ বাংলায় তৈরি হয়। মুঘলদের বাংলা দখলের পর জলদস্যুতা রুখতে তারা একটি শক্তিশালি নৌবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। সে লক্ষ্যে তারা ভোলা, সন্দ্বীপ, নারায়ণগঞ্জের কদম রসুল, খিজিরপুর, ঢাকা ইত্যাদি কৌশলগত জায়গায় নৌঘাটি স্থাপন করে। কিন্তু মুঘলরা সমুদ্রে দুর্বল হওয়ায় তারা বার্মিজ জলদস্যুদের থামাতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীকালে মুঘলরা শায়েস্তা খানকে জলদস্যু দমনের দায়িত্ব প্রদান করে। দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মাথায় শায়েস্তা খান প্রায় ৩০০ নৌকা ও জাহাজ সংগ্রহ করেন। পরে তিনি বার্মিজ জলদস্যুদের দমন করেন এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং আরাকান বার্মিজদের থেকে ছিনিয়ে আনেন।

ব্রিটিশ শাসনামলে তারা ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ নৌঘাটি স্থাপন করতে থাকে। তবে তাদের মূল মনোযোগ ছিল পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে কেন্দ্রীভূত। বাংলাসহ উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে কোন নৌ-অবকাঠামো নির্মাণের কোন উদ্যোগ ব্রিটিশরা গ্রহণ করে নি।

১৮০৫ সালের বিখ্যাত ট্রাফালগার যুদ্ধে ব্রিটিশ নৌবাহিনী বাংলায় তৈরি জাহাজ ব্যবহার করে। ১৮১৮ সালে জার্মান নৌবাহিনীর কাঠ-নির্মিত ফ্রিগেট ডাচল্যান্ড চট্টগ্রামে তৈরি হয় ।

 

পাকিস্তান পর্ব

পাকিস্তান সৃষ্টির পরও পূর্ব পাকিস্তানে নৌ-অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়টি গুরত্ব পায় নি। ১৯৬৫ সালে ভারতের সাথে যুদ্ধের পর নৌবাহিনীর প্রতিকী উপস্থিতি হিসেবে প্রথমবারের মত চট্টগ্রামে চারটি টহল জাহাজ মোতায়েন করা হয়। ১৯৭০ সালে খুলনায় সীমিত অবকাঠামো নিয়ে পিএনএস তিতুমীর প্রতিষ্ঠা করা হয়। একই বছর চট্টগ্রামে নৌ কমান্ডারকে কমোডোর কমান্ডিং চিটাগাং এ উন্নীত করা হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে কোন অবকাঠামো বা সরঞ্জাম সম্প্রসারণ বা আধুনিকায়ন করা হয় নি। ১৯৭১ সালের শেষ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে নৌশক্তি বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল।

 

১৯৭১: স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্ম

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সৈন্যরা পূর্ব পাকিস্তানে নৃশংস সামরিক আক্রমণ শুরু করে যার ফলস্বরূপ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। পাকিস্তান নৌবাহিনীর ফ্রান্সে নির্মাণাধীন ডুবোজাহাজ পিএনএস ম্যাংরো থেকে ৮ জন বাঙালি নাবিক বিদ্রোহ করেন এবং বাংলাদেশে ফিরে নৌবাহিনীর ভিত্তি তৈরি করেন। পরবর্তীতে আরও বিদ্রোহী নৌসেনা তাদের সাথে যুক্ত হন। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে সেক্টর কমান্ডার্স কনফারেন্সে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে নৌবাহিনীর জনবল ছিল ৪৫ জন আর সরঞ্জাম ছিল ভারত থেকে পাওয়া দুটি টহল জাহাজ পদ্মা ও পলাশ । এই জাহাজগুলো পাকিস্তানি নৌবহরের উপর আক্রমণের কাজে ব্যবহৃত হত। যুদ্ধের সময় ১০ নম্বর সেক্টর ছিল নৌ সেক্টর। তবে যুদ্ধকালীন সময়ে নৌকমান্ডোরা সারা দেশেই অভিযান চালিয়েছেন। অন্য সেক্টরে অভিযান চালানোর সময় সেক্টর কমান্ডের সাথে সমন্বয় করে নেয়া হত।

যুদ্ধের সময় নৌসেনাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল সামুদ্রিক যোগাযোগের পথ বন্ধ করা এবং সকল সমুদ্র ও নদীবন্দরগুলো ব্যবহার অনুপযোগী করে তোলা। সে লক্ষে তারা সারা দেশব্যাপী ৪৫টি প্রথাগত ও অপ্রথাগত আক্রমণ চালান। ১৯৭১ সালের ১৫ অগাস্ট বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর নৌযোদ্ধারা অপারেশন জ্যাকপট নামক একটি কমান্ডো অভিযান চালান চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর এবং চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরে। এই অভিযানে মোট ২৬টি জাহাজ ধ্বংস হয় ও আরও বহু জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব জাহাজের মধ্যে রয়েছে এমভি হরমুজ, এমভি আল আব্বাস, ওরিয়েন্ট বার্জ নং-৬ এবং এসএস লাইটিং এর মত জাহাজ যারা পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বহন করছিল। দেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই নৌকমান্ডোরা সারাদেশে অসংখ্য সফল অভিযান পরিচালনা করেন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ভারতীয় বিমানবাহিনীর ভুলবশত আক্রমণে পদ্মা ও পলাশ ডুবে যায়। অফিশিয়াল তথ্য অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধকালে নৌবাহিনীর সাথে যুক্ত ছিল ৩৩৪ জন সদস্য যাদের মধ্য ২২ জন যুদ্ধে শহীদ হন ।

 

প্রশাসনিক শাখা

বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে ৬টি প্রশাসনিক শাখা রয়েছে:

  • নির্বাহী শাখা
  • প্রকৌশল শাখা
  • সরবরাহ শাখা
  • তড়িৎ শাখা
  • শিক্ষা শাখা
  • চিকিৎসা শাখা

সরঞ্জাম

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ফ্ল্যাগশিপ বানৌজা বঙ্গবন্ধু।

২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে রয়েছে ৪টি ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ফ্রিগেট, দুইটি টহল ফ্রিগেট, ৪টি কর্ভেট, ৩৮টি বিভিন্ন ধরনের ছোট যুদ্ধজাহাজ এবং ৩০টি সহায়ক যুদ্ধজাহাজ। ডুবোজাহাজ শাখায় রয়েছে দুইটি ডিজেল ইলেক্ট্রিক অ্যাটাক ডুবোজাহাজ। নৌবাহিনীর উড্ডয়ন শাখার রয়েছে বিভিন্ন ধরনের হেলিকপ্টার ও স্থির ডানার বিমান। পাশাপাশি নৌবাহিনীর স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডাইভিং অ্যান্ড স্যালভেজ(সোয়াডস) নামে একটি বিশেষ বাহিনীও রয়েছে ।

 

ডুবোজাহাজ

১২ মার্চ ২০১৭ দুইটি টাইপ ০৩৫ (মিং ক্লাস) ডুবোজাহাজ সংযোজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ডুবোজাহাজ যুগে প্রবেশ করে।

error: দুঃখিত ! কপি/পেষ্ট থেকে বিরত থাকুন